ইসলামে এত ‘না’ কেন?
★ ইসলামে এত “না” কেন?
আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো ভাবেন ইসলামে এত বিধি-নিষেধ কেন? সবকিছুতেই যেন ‘না’ ‘না’…!
‘গান শোনা যাবে না’,’মুভি দেখা যাবে না,’ ‘ছেলেদের সাথে ফ্রেন্ডশীপ করা যাবে না’,’বেপর্দা হওয়া যাবে না’, নারীকে ইচ্ছেমত চলতে দেয়া যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি।
হাজারটা জাস্টফ্রেন্ড মেইনটেইন করে চলে আসা মেয়েটাও যখন নতুন পর্দা ধরে, তখন প্রথমদিকে হয়তো সেও খানিক অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে, উফ্…….এতদিনকার বন্ধুদের সাথে একটু কথাও বলা যাবে না..!এত নিষেধের মধ্যে থাকা যায় নাকি!
উত্তরটা শুরু থেকেই শুরু করি তাহলে।আমাদের ছেলেবেলা থেকেই প্রত্যেকের বাবা-মায়েরা ‘না’এর একটা গন্ডি টেনে দেন আমাদের আশেপাশে।
আইসক্রিম খাওয়া যাবে না-ঠান্ডা লাগবে,বাইরে একা বের হওয়া যাবে না-ছেলেধরা ধরে নিয়ে যাবে,অন্যের জিনিস না বলে নেওয়া যাবে না,মিথ্যা বলা যাবে না।
এই যে এত এত ‘না’ এর ভেতর আমাদের ছেলেবেলা কাটে।আর আমরা কিন্তু অধিকাংশ ‘না’ই মেনে চলি এবং বিপদমুক্ত হয়ে বড় হই।এবং বড় হয়ে এক পর্যায়ে বুঝতে পারি ওই ‘না’গুলো না মানলে আমাদের জীবনে নির্ঘাত বড় কোন বিপর্যয় ঘটত।
এখন আসল কথায় আসি,আমাদের প্রকৃত অভিভাবক কে?
ক্ষুদ্র কীট থেকে মানবজাতি সকলের একমাত্র অভিভাবক হচ্ছেন মহান আল্লাহ তাআলা। তিনি যেগুলো ‘না’ করেছেন সেগুলো না মানলে আমাদের পতন অনিবার্য।
এখানে মূল অভিভাবকত্ব কার সেটা নিশ্চয়ই পরিস্কার হলো….
এবার আসি,ইসলাম কেন এত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সে জায়গাটিতে।
মূলত,ইসলাম জানে দেয়ালের কোথায় ফুটো আছে এবং কোন ফুটো ধীরে ধীরে দরজাতে পরিনত হতে পারে।ইসলাম জানে কোন কিছুর চূড়ান্ত পরিনতির শুরুর দরজাটা কোথায়।ঠিক সেখানটাতেই ইসলামের নিষেধাজ্ঞা। তাই লৌকিক কোন বিষয়কেই সে ঢালাওভাবে অনুমোদন দেয়না।ইসলাম নফসে আম্মারার সামান্য অন্যায় আভাসকেও গলাটিপে হত্যা করতে চায় বলে বারবার আমাদের সামনে এমন নিষেধাজ্ঞা চলে আসে।আর নফসে আম্মারার কাজই হচ্ছে ইচ্ছেনুযায়ী চলতে চাওয়া।
এ পর্যায়ে একটি গোনাহ নিয়ে কথা বলা যাক।
ধরুন, আপনি চোগলখুরি করলেন, মানে একের কথা অন্যের কানে ঢেলে ঝগড়ার সৃষ্টি করে ফেললেন।এটা একসময় বেড়ে গিয়ে মারামারি পর্যায়ে পৌছে একটা মার্ডার হয়ে গেল।এখন বলুন এর মূলে কে?
নিজের অপরাধের দায় এড়াতে পারবেন তো?কেয়ামতের ময়দানে পারলে নিজের দোষ কাটাতে চেষ্টা করতে যেয়েন।
আর এর মূলে কি?…..
আড্ডাবাজি অথবা খোশগল্প…..তাইতো..!
তাহলে এই খোশগল্পের নামে নাখোশগল্প আপনার ওপরে খুনের দায় ভালোভাবেই চাপিয়ে দিলো তাই না?
এটাই ফুটো থেকে দরজা হওয়ার উদাহরন।
এই আড্ডাবাজিটা গীবত,চোগলখুরি,নিন্দা,মিথ্যাচার ইত্যাদির উৎপত্তিস্থল।তাই অনর্থক খোশগল্প ইসলাম সমর্থন করে না।’না’এর সার্থকতা সেখানেই।
আসলে গান শোনা,ছেলেদের সাথে ফ্রেন্ডশীপ,পর্দা না করা,পর্ণ দেখা ইত্যাদি গোনাহ মূলত একটি আগুনের মালার বিভিন্ন গুটি।আপনাদের একটা চার্ট দেখাতে চেষ্টা করি।মিলিয়ে দেখুনঃ–
জাস্টফ্রেন্ড বেপর্দা হওয়া পর্ণ দেখা
| | |
বয়ফ্রেন্ড ইভটিজিং নিয়ন্ত্রণ হারানো
|____________|____________|
|
ধর্ষন
ফলাফলটা দেখুন।
প্রত্যেকটা কাজের শুরু এমন ছোটখাটো হালকাই থাকে,তারপর এটা পাহাড় হয়ে যায়।ওপরের চেইন বিশৃঙ্খলতার শৃঙ্খল ছাড়া আর কিছুই না।
এবার আসি আমরা এটা ভাবি কেন সে প্রশ্নে?
এটা হয় আমাদের পরিবেশের কারনে।বিয়ে বাড়িতে দশ-এগারো বছরের মেয়েকে নামাজ পড়তে দেখে সবাই আবেগে আপ্লুত হয়ে বলে ওঠে,ওমা!এতটুকু মেয়ে বিয়ে বাড়িতে এসেও কেমন নামাজ পড়ছে দেখ….!
কেন?
বিয়ে বাড়িতে নামাজ ফরজ হয়ে যাওয়া মেয়ের নামাজ পড়তে দেখে এত অবাক হবার কি আছে…?
এটা কি পৃথিবীর দশমাশ্চর্য লাগছে তাদের কাছে…!
বরঞ্চ নামাজ না পড়তে দেখলেই তো অবাক হবার কথা।স্বাভাবিক বিষয়টাই কালের বিবর্তনে এখন অস্বাভাবিক হয়ে গেছে।
এই যে উল্টো স্রোত…..!
শয়তানের হাজার বছরের চেষ্টায় তৈরী এই স্রোতের বিপরীতে আমরা ঢেউ ভেঙে তীরে ফিরতে পারিনা।
যেমন, আমাদের বলা উচিত ছিল(তর্কের খাতিরে উদাহরন) দেশে এত স্কুল,কলেজ আছে কেন..!
সব মাদ্রাসা নয় কেন?আমরা এটা বলিনা।
কারন?
কারন শয়তান আমাদের অন্তর পচিয়ে দিয়েছে।এটা বলার কথা আমরা ভাবতেই পারিনা…!
নয়তো রামাদানে,যেখানে শয়তান বন্দী থাকে,সেখানে এগারোটা মাসের কাজের সাথে রামাদানের ভেতর কাজে মোটাদাগে পার্থক্য আনতে পারিনা।
কেন?
আসলে শয়তান বাকি এগারো মাসে কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা আমাদের প্রত্যেকের অন্তরকে তার নিজের অন্তরের মত করে দিয়েছে , যাতে রামাদানে সে নিজে বন্দী থেকেও কাজ ঠিকঠাক হতে থাকে।অনেকটা দক্ষ কর্মচারীর ওপর কাজের ভার দিয়ে মালিকপক্ষের জেলে যাওয়ার মতো।এখানে কর্মচারী আমাদের নফস।
আমরা ডেসটিনেশন থেকে সম্পূর্ণ উল্টো পথে হাঁটছি,শুরু থেকেই।এটাই ‘না’ কে সহজ ভাবে, স্বাভাবিকভাবে না নেওয়ার কারন,এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারন।
তথাকথিত নারীবাদীদের এই ‘না’ তেই প্রবল এলার্জি।এত নিষেধাজ্ঞা তাদের সহ্য হয়না।
তাদের সহ্য হয় ধর্ষনের বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমে ফের ধর্ষনের শিকার হওয়াটা,পর্দা করাটা নয়। আল্লাহ তাদের এবং আমাদের, সবাইকে হেদায়েত দান করুন।আমিন…..
ইসলামে এত ‘না’ কেন?